রাস্তার একপাশ দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটছিলেন ১৮-১৯ বছরের এক তরুণ। হঠাৎই বেপরোয়া গতির একটি ছোট হাতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে সোজা তাঁর কোমরে। মুহূর্তেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখলেন— কোমর ও হাঁটুর সংযোগকারী প্রধান হাড় ফিমার বোন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।
অস্ত্রোপচারে প্লেট বা নেইল ব্যবহার করেও ইঞ্চিখানেক ফাঁক থেকে যাচ্ছিল। কীভাবে মেরামত হবে? তখনই রক্ষাকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হয় ‘বোন ব্যাংক’। যেমন ব্লাড ব্যাংকে রক্ত সংরক্ষিত থাকে, তেমনই এখানে থাকে হাড়ের টুকরো। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় হাড় সংগ্রহ করে ব্যবহার করলেন, সফল হল অস্ত্রোপচার। সবচেয়ে বড় বিষয়— লাখ টাকার প্রস্থেসিস লাগেনি।
হাড় প্রতিস্থাপনে নতুন দিগন্ত
চোট-আঘাত, ক্যান্সারে হাড় বাদ পড়া, সংক্রমণ বা জটিল সার্জারির মতো নানা ক্ষেত্রে এখন হাড় প্রতিস্থাপনে ভরসা বোন ব্যাংক।
আগামী সপ্তাহে, সম্ভবত ১৬ সেপ্টেম্বর, রাজ্যের এক নম্বর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পিজির অ্যানেক্স শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে চালু হচ্ছে পূর্ব ভারতের প্রথম সরকারি ‘বোন ব্যাংক’। হাসপাতালের দোতলার প্রায় ৬৫০ বর্গফুট জায়গায় তৈরি হয়েছে আধুনিক এই কেন্দ্র।
অর্থোপেডিক, সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, অঙ্কো-সার্জারি, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ—সব জায়গার চিকিৎসকরা এখান থেকে হাড় নিয়ে রোগীদের অস্ত্রোপচারে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে সরকারের প্রস্থেসিস খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
কীভাবে হাড় সংরক্ষণ করা হবে?
দুইভাবে হাড় সংরক্ষণ সম্ভব—
-
অস্ত্রোপচারের সময় বাদ যাওয়া হাড় (যেমন হিপ বা নি রিপ্লেসমেন্টে) রোগী ও পরিবারের অনুমতি নিয়ে রাখা হবে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এগুলো ৬ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকে।
-
ক্যাডাভার ডোনেশন— ব্রেন ডেড রোগীর পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে হাড় সংগ্রহ করা হবে। যদিও পরিবার সাধারণত এই অনুমতি দিতে চান না বলে আশঙ্কা আছে।
বিশেষজ্ঞের বক্তব্য
পিজির প্রস্তাবিত বোন ব্যাংকের অন্যতম প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মুকুল ভট্টাচার্য বলেন—
“ক্যান্সার সার্জারি থেকে ট্রমা কেয়ার— সর্বত্র এখন বোন ব্যাংকের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই চালু করা যাবে। এতে পূর্ব ভারতের মানুষ সরকারিক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো বোন ব্যাংকের সুবিধা পাবেন।”
বর্তমানে দেশে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে স্বীকৃত বোন ব্যাংক রয়েছে— যেমন মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চেন্নাইয়ের একটি সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু পূর্ব ভারতে এর আগে এমন সুবিধা চালু হয়নি।



