পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করেছে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প, যা রাজ্যের সমস্ত বাসিন্দাদের জন্য নগদহীন এবং ব্যাপক স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা প্রদান করে। পরিবার প্রতি বছরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেয় এই স্কিম। এই ব্লগে আমরা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং এই সুবিধা কীভাবে পাবেন, তা নিয়ে আলোচনা করেছি।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প কী?
স্বাস্থ্য সাথী একটি নগদহীন স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প, যা প্রতি বছর পরিবার প্রতি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ কভার করে। সম্পূর্ণ স্কিমটি রাজ্য সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়, অর্থাৎ সুবিধাভোগীদের কোনো প্রিমিয়াম দিতে হয় না। এই প্রকল্পের আওতায় সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালেই চিকিৎসা করানো যায়।
নগদহীন সেবার অর্থ কী?
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে নগদহীন সেবা বলতে বোঝায় যে সুবিধাভোগীকে কোনো চিকিৎসার জন্য পকেট থেকে টাকা দিতে হবে না, যতক্ষণ না তা কাভারেজ সীমার মধ্যে থাকে। সব ধরনের চিকিৎসার খরচ, যেমন হাসপাতালে ভর্তি, অপারেশন, ডায়াগনস্টিক্স, এবং ভর্তি-পূর্ব ও ভর্তি-পূর্ব পরবর্তী খরচ সরকার সরাসরি হাসপাতালকে প্রদান করে।
কোন হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেওয়া যাবে?
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় যে কোনও তালিকাভুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যাবে। এই হাসপাতালগুলো সরকারি বা বেসরকারি হতে পারে এবং সেগুলোকে তাদের পরিকাঠামো, সেবা এবং সামগ্রিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত হাসপাতালের তালিকা স্বাস্থ্য সাথী মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে, যা থেকে সুবিধাভোগীরা উপযুক্ত হাসপাতাল খুঁজে নিতে পারেন।
হাসপাতালে কি কোনো অর্থ প্রদান করতে হবে?
না, সুবিধাভোগীদের জন্য কোনো চিকিৎসার জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে না। পুরো প্রক্রিয়াটি নগদহীন, এবং পরিবার প্রতি বছরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ সরাসরি সরকার থেকে হাসপাতালকে প্রদান করা হয়। যদি কোনো হাসপাতাল সুবিধাভোগীর কাছে অর্থ দাবি করে, তবে তা অবিলম্বে স্বাস্থ্য সাথী হেল্পলাইনে জানাতে হবে।
কীভাবে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যালান্স এবং খরচ চেক করবেন?
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগীরা খরচ এবং অবশিষ্ট ব্যালান্স চেক করতে পারেন। প্রতিটি চিকিৎসার পরে কার্ড রিডারে খরচ আপডেট হয়, এবং সুবিধাভোগীরা স্বাস্থ্য সাথী মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই তথ্য দেখতে পারেন অথবা হাসপাতাল থেকে প্রিন্টআউট চাইতে পারেন।
যদি স্মার্ট কার্ড রিডার কাজ না করে, তাহলে কী হবে?
যদি কোনো হাসপাতালে স্মার্ট কার্ড রিডার কাজ না করে, তাহলে সুবিধাভোগীকে হাসপাতালের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সাথী হেল্পলাইনে ফোন করে সমস্যার রিপোর্ট করতে হবে। এছাড়াও, কিভাবে চিকিৎসা গ্রহণ অব্যাহত রাখা যায়, সে বিষয়ে নির্দেশিকা চাইতে হবে।
যদি স্মার্ট কার্ড ভুলে যান, তাহলে কী করবেন?
যদি সুবিধাভোগী হাসপাতাল যাওয়ার সময় স্মার্ট কার্ড নিয়ে যেতে ভুলে যান, তাহলে নগদহীন সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে স্বাস্থ্য সাথী হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে পরিস্থিতির কথা জানাতে হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য নির্দেশিকা পেতে হবে। তবে, কোনো অসুবিধা এড়ানোর জন্য সর্বদা স্মার্ট কার্ডটি সঙ্গে রাখা উচিত।
স্বাস্থ্য সাথী স্কিমের অধীনে কী পরামর্শ ও ওষুধ কভার করা হয়?
হ্যাঁ, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন পরামর্শ ও ওষুধ কভার করা হয়। এর মধ্যে ভর্তি থাকা অবস্থায় করা সব ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও অন্তর্ভুক্ত। তবে, ভর্তি না হওয়া ক্ষেত্রে, যেমন ওপিডি (আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট) সেবায়, পরামর্শ এবং ওষুধের খরচ এই স্কিমের অধীনে কভার করা হয় না।
যদি হাসপাতালে ওষুধ বা পরীক্ষা সুবিধা না থাকে?
যদি কোনো হাসপাতালের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা পরীক্ষার সুবিধা না থাকে, তবে হাসপাতালটি এইগুলি বাহির থেকে সংগ্রহ করবে এবং সুবিধাভোগীর কাছ থেকে কোনও অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া হবে না। এমন ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীর কোনও অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে না।
হাসপাতালে ভর্তি-পূর্ব এবং ভর্তি-পূর্ব পরবর্তী খরচ কী?
ভর্তি-পূর্ব খরচ হল ভর্তি হওয়ার আগে এক দিন পর্যন্ত করা ডায়াগনস্টিক্স, পরামর্শ এবং ওষুধের খরচ। ভর্তি-পূর্ব পরবর্তী খরচ হল হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর পাঁচ দিন পর্যন্ত করা ওষুধ এবং ফলো-আপ পরামর্শের খরচ। এই খরচগুলি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে কভার করা হয় এবং সুবিধাভোগীর পক্ষ থেকে কোনও অর্থ প্রদান করতে হয় না।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে ব্যালান্স কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
প্রতিবার চিকিৎসার জন্য কার্ড ব্যবহার করা হলে ব্যালান্স আপডেট হয়। কার্ডে কত খরচ হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ব্যালান্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করা হয় এবং স্বাস্থ্য সাথী মোবাইল অ্যাপে প্রতিফলিত হয়। সুবিধাভোগীরা প্রতিটি চিকিৎসার পরে তাদের ব্যালান্সের প্রিন্টআউট চাইতে পারেন।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইকরণের প্রক্রিয়া কী?
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের অপব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য ভর্তি এবং ছুটি নেওয়ার সময় সুবিধাভোগীর পরিচয় যাচাই করতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রয়োজন হয়। সাধারণত, পরিবারের প্রধানের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, যা কার্ডে নিবন্ধিত, সেটি প্রয়োজন হয়। এটি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং শুধুমাত্র প্রকৃত সুবিধাভোগীকে সুবিধা পাওয়া নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
যদি কোনো রোগ প্যাকেজ রেটে না থাকে, তাহলে কী হবে?
যদি কোনও রোগ পূর্বনির্ধারিত প্যাকেজ রেটে না থাকে, তাহলে হাসপাতালটি প্রকল্পের শাসক সংস্থার কাছ থেকে একটি ব্যতিক্রম বা অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারে। অনুমোদন প্রক্রিয়া সাধারণত দ্রুত হয়, তবে চিকিৎসার সময়সীমা হাসপাতাল এবং অনুরোধের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
যদি পরিবহন খরচ ২০০ টাকার বেশি হয়, তাহলে কী হবে?
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প প্রতিটি হাসপাতালে ভর্তির জন্য সর্বাধিক ২০০ টাকা পর্যন্ত এবং প্রতি পলিসি বছরে সর্বাধিক ২০০০ টাকা পর্যন্ত পরিবহন ভাতা প্রদান করে। যদি পরিবহন ব্যয় এই পরিমাণের বেশি হয়, তবে অতিরিক্ত খরচ সুবিধাভোগীকে বহন করতে হবে, যদি না সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত ভাতা নির্দিষ্ট করা হয়।
হাসপাতাল যদি সুবিধাভোগীর কাছে কোনো অর্থ চায়, তাহলে কী করবেন?
যদি কোনো হাসপাতাল স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসার জন্য সুবিধাভোগীর কাছে অর্থ দাবি করে, তবে সুবিধাভোগীকে কোনো অর্থ প্রদান করা উচিত নয় এবং অবিলম্বে স্বাস্থ্য সাথী টোল-ফ্রি হেল্পলাইন (১৮০০৩৪৫৫৩৮৪) নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। হেল্পলাইন ২৪x৭ উপলব্ধ এবং অভিযোগের জন্য সাহায্য করে এবং প্রকল্পের নির্দেশিকা অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করে।
উপসংহার
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদানের জন্য একটি শক্তিশালী উদ্যোগ। এর বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানলে সুবিধাভোগীরা এই স্কিমের সর্বাধিক সুবিধা নিতে এবং কোনও আর্থিক বোঝা ছাড়াই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারবেন। কোনও প্রশ্ন বা সাহায্যের জন্য, সুবিধাভোগীদের স্বাস্থ্য সাথী হেল্পলাইন এবং মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।