চীনে নতুন করে ভাইরাসের প্রকোপ ছড়ানোর খবর আসার পর থেকে অনেকেই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে মেটানিউমোভাইরাস (HMPV) নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা একটি শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস এবং এখনকার পরিস্থিতি দেখে অনেকেই কোভিডের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে, এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়, বরং বেশিরভাগ দেশেই এই ভাইরাসটি পরিচিত এবং সাধারণভাবে এটি শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়।
ভাইরাসটি কী এবং কীভাবে ছড়ায়?
মেটানিউমোভাইরাস (HMPV) একটি শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, যা মূলত সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে। এই ভাইরাসের কারণে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ হয়, এবং এটি শিশু, বয়স্ক এবং যারা ইমিউনিটি দুর্বল তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি স্বাভাবিক সর্দি-জ্বরের মতো হয় এবং বাড়িতেই সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।
সচেতনতা এবং প্রতিরোধের উপায়
অযথা ভয়ের কিছু নেই। ভাইরাসটি নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা মূলত অতিরিক্ত গুজব এবং ভুল তথ্যের কারণে। তবে, কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আপনি মেটানিউমোভাইভি থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন:
- ভিড় এড়িয়ে চলুন – জনবহুল এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, বিশেষত যখন আপনি জানেন যে সেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।
- মাস্ক পরুন – ভিড় স্থানে বা যাদের মধ্যে সর্দি-কাশির লক্ষণ রয়েছে তাদের কাছাকাছি গেলে মাস্ক পরুন।
- হাত ধোয়া – নিয়মিত হাতে সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- নিজের ইনফেকশন হলে সাবধানতা অবলম্বন করুন – যদি আপনি আক্রান্ত হন, তাহলে প্রথম ৫ দিন মাস্ক পরুন এবং বেশি করে পানি খান, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
- এত বেশি ভয় পাবেন না – এই ভাইরাসের জন্য আলাদা কোনো ভ্যাকসিন নেই, তবে সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করলেই এটি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
বিশেষ সতর্কতা: শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল ইমিউনিটির ব্যক্তিরা
যারা শিশু, বয়স্ক বা ইমিউনিটি দুর্বল, তাদের জন্য ভাইরাসটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যেমন তাদের বেশি করে জল খাওয়ানো, মাস্ক পরানো, এবং বাইরে যেতে না দেওয়া।
ভারতের সরকারের অবস্থান
বিশ্বের নানা দেশে এই ভাইরাস সংক্রান্ত রিপোর্টের পর ভারতের সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই ভাইরাস নিয়ে প্যানিক করার কোনো কারণ নেই। আমাদের সচেতন থাকা দরকার, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এই ভাইরাসের ওপর পর্যাপ্ত নজরদারি চালাচ্ছে এবং দেশের জনগণকে সঠিক তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।
শেষ কথা
এখনও কোভিডের স্মৃতি অনেকের মনে আঁচড় কাটছে, তাই নতুন ভাইরাস নিয়ে অনেকের মধ্যেই অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তবে, সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর কিছু নেই। সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং গুজব থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি।