সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার—একটি নীরব অথচ ভয়ঙ্কর মারণরোগ। প্রতিবছর এর শিকার হন লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগ প্রতিরোধের একটি কার্যকর উপায় হলো এইচপিভি (HPV) ভ্যাকসিন। তবে এতদিন তা শুধু বেসরকারি উদ্যোগে, অতিরিক্ত খরচে পাওয়া যেত। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের জন্য এল বড় খবর—২০২৭ সাল থেকে স্কুলে ক্যাম্প করে বিনামূল্যে দেওয়া হবে এই টিকা।
কীভাবে টিকাকরণ হবে?
এই টিকাকরণ হবে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের সহায়তায়, বিদ্যালয় পর্যায়ে। ২০২৭ সাল থেকে রাজ্যে শুরু হবে এই ক্যাম্পেইন। ছাত্রীদের দেওয়া হবে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) ভ্যাকসিন, যা জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা।
ভারতের প্রেক্ষাপটে কেন এই টিকা গুরুত্বপূর্ণ?
-
বিশ্বে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে মৃত নারীদের ২৫% ভারতীয়।
-
২০২৩ সালে ভারতে আক্রান্ত ১.২৪ লক্ষ নারী, মৃত্যু ৮০ হাজার।
-
স্তন ক্যান্সারের পরে ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক নারী মৃত্যু হয় এই ক্যান্সারেই।
-
প্রধান কারণ: HPV ভাইরাস, যা টিকায় প্রতিরোধযোগ্য।
কে পাবে এই টিকা?
-
৯ থেকে ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েরা প্রাথমিক লক্ষ্য।
-
১৫ বছরের মধ্যে নিলে ২টি ডোজ, না হলে ৩টি ডোজ।
-
প্রথম ডোজের পর ২ মাস ও ৬ মাস ফারাকে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়।
বাজারমূল্য কত ছিল এই ভ্যাকসিনের?
-
ভারতীয় টিকা: ₹2600 প্রতি ডোজ
-
আমেরিকান টিকা: ₹3500–₹10,000 পর্যন্ত
-
এতদিন শুধুই বেসরকারি উদ্যোগে এই টিকা পাওয়া যেত, ফলে সাধারণ পরিবারের নাগালের বাইরে ছিল।
বিনামূল্যে টিকাকরণে কী লাভ হবে?
-
গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা পাবেন জীবনদায়ী সুরক্ষা।
-
স্কুল ক্যাম্পে টিকা দেওয়া সহজ ও ব্যাপকতর হবে।
-
সচেতনতা ও প্রতিরোধ—দুই-ই একসঙ্গে হবে।
চিকিৎসকদের মতামত
ডাঃ প্রণবকুমার বিশ্বাস (ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ) বলেন—
“অসংখ্য মেয়েরা শুধুমাত্র টাকার জন্য HPV ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত। এটা শুধু প্রতিরোধ নয়, গরিব মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখার উপায়।”
উপসংহার
এইচপিভি টিকা শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে না, এটি নারীস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।