ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন ‘ইন্টারস্টিশিয়াল ব্র্যাকিথেরাপি’ (Interstitial Brachytherapy) নামের আধুনিক রেডিয়েশন চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে ১০ ধরনের ক্যান্সারে সাফল্য পাচ্ছে।
এই পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে থেকে নয়, বরং শরীরের ভিতরে সরাসরি রেডিয়েশন দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ক্যান্সার আক্রান্ত অংশে সূক্ষ্ম ক্যাথেটার ঢুকিয়ে তাতে রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ প্রবেশ করানো হয়। এই আইসোটোপ ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে দেয়, কিন্তু আশপাশের সুস্থ কোষ বা অঙ্গকে ক্ষতি করে না।
এনআরএসের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. সুমন ঘোড়াই জানিয়েছেন —
“শরীরের বাইরে থেকে রে দেওয়ার চেয়ে এই চিকিৎসা অনেক বেশি নিখুঁত ও কার্যকর। এতে রেডিয়েশন সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের কাছে কাজ করে, ফলে চিকিৎসার ফলাফল দ্রুত ও ভালো হয়। তবে সার্জিক্যাল দক্ষতা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই পদ্ধতিতে বর্তমানে দিনে দুইবার রেডিয়েশন দেওয়া হচ্ছে — সকাল ও বিকেলে। সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ হচ্ছে মাত্র দুই সপ্তাহে, যেখানে প্রচলিত রেডিয়োথেরাপিতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস।
ডা. ঘোড়াইয়ের নেতৃত্বে থাকা এনআরএস টিম জানিয়েছেন, এই চিকিৎসায় মাথা-ঘাড়, ঠোঁট, জিভ, মুখ, সার্ভিক্স (জরায়ুমুখ), বক্ষপ্রাচীর ও স্তন ক্যান্সার সহ অন্তত ১০ ধরনের ক্যান্সারে সাফল্য মিলছে। রোগীদের অবস্থাও স্থিতিশীল এবং ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও রোধ হচ্ছে।
যদিও এই চিকিৎসা ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ রেডিয়েশন শরীরের ভিতর দিয়ে দেওয়া হয়, ফলে চিকিৎসকের সামান্য ভুলে রক্তপাত বা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এনআরএসে আপাতত এই পদ্ধতি লোকাল অ্যানাস্থেশিয়াতে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়াতে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,
“সরকারি হাসপাতালে এত জটিল চিকিৎসা চালু করা সত্যিই প্রশংসনীয়। এনআরএস রেডিয়োথেরাপি টিম ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।”
এই উদ্যোগে এনআরএস প্রমাণ করল— ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নত প্রযুক্তি আর দক্ষ চিকিৎসকদের সমন্বয় ঘটলে সরকারি ব্যবস্থাতেও বিশ্বমানের চিকিৎসা সম্ভব।



