অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি — এক ৩৩ বছর বয়সি যুবকের ফুসফুস ধুইয়ে তাঁকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। ‘পালমোনারি অ্যালভিয়োলার প্রোটিনোসিস’ (Pulmonary Alveolar Proteinosis বা PAP) নামের এই বিরল রোগে প্রতি ১০ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজন আক্রান্ত হন মাত্র। এই রোগে রোগীর ফুসফুস সাদা প্রোটিন জাতীয় তরলে ভরে যায়, ফলে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা জাহিরুল শেখ (নাম পরিবর্তিত)-এর জীবন বাঁচাতে বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি ‘হোল লাং লাভাজ’ (Whole Lung Lavage) প্রয়োগ করেন এনআরএস-এর চিকিৎসকরা। বুধবার দুপুরে ৬ ঘণ্টা ধরে চলে এই জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়া, যেখানে প্রায় ১৫ লিটার স্যালাইন ব্যবহার করে তাঁর ডানদিকের ফুসফুস থেকে তরল পদার্থ বের করা হয়। এখন রোগী অক্সিজেন ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন।
এই চিকিৎসায় নেতৃত্ব দেন দুই বিশিষ্ট অধ্যাপক —
ডা. জয়দীপ দেব, অধ্যাপক ও প্রধান, বক্ষরোগ বিভাগ, এবং
ডা. শম্পা দত্তগুপ্ত, অধ্যাপক ও প্রধান, কার্ডিয়োথোরাসিক অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগ।
দুই বিভাগের প্রায় ৩০ জন চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। আগামী সপ্তাহে রোগীর বাম ফুসফুস থেকেও তরল বের করা হবে।
চিকিৎসকদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের চিকিৎসা এই প্রথম। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়, অথচ এনআরএস-এ এই চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়েছে।
বক্ষ বিভাগের পিজিটি ডাক্তার মুস্তাফি আহমেদ জানান,
“এই রোগে সারফেকটেন্ট প্রোটিন জমে ফুসফুস শক্ত হয়ে যায়, ফলে রোগী শ্বাস নিতে পারেন না। সেই প্রোটিন অপসারণের জন্যই হোল লাং লাভাজ প্রয়োজন হয়। আমরা বিশেষ ‘ডাবল লুমেন ইনটিউবেশন’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছি, যাতে এক ফুসফুস ধোয়ার সময় অন্যটি যন্ত্রের মাধ্যমে সচল রাখা যায়।”
চার বছর ধরে শ্বাসকষ্টে ভোগা জাহিরুলের জন্য এই চিকিৎসাই ছিল শেষ ভরসা — আর সেই ভরসাই এবার সাফল্যের নতুন দিশা দেখাল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।



